ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি যে দৈনন্দিন কাজের লিস্ট বানিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে তাহলে বেশী কাজ করা যাবে। কত জায়গায় পড়লাম একই জিনিস। লিস্ট করো, কাজ করো, প্রোডাক্টিভ দিন পার করো আর সফলতার দিকে এগিয়ে যাও। খালি খালি একটি উপদেশের মত শুনালে ও এটি যে কি পরিমাণ ইফেক্টিভ তা নিজে না করা পর্যন্ত অনুধাবন করা কঠিন। সব অসাধারণ ও সফল মানুষ গুলোই দৈনিক রুটিন অনুসরণ করতেন ও করেন।
কি লাভ হবে নিজের এ রুটিন ফলো করলে? প্রথম উপকারটি হলো নিজের সময়ের উপর একটি নিয়ন্ত্রন থাকবে। ২৪ ঘন্টা যে কোন ভাবেই কিন্তু কেটে যায়। আপনি প্ল্যান করে কাজ করেন বা না করেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কিন্তু চলে যাবে। এ সমান সময় কাজে লাগিয়ে একজন অনেক কিছু করে ফেলছেন আবার অন্যজন পারছেন না। পার্থক্য শুধু রুটিন ও পরিকল্পনায়।কাজের লিস্ট করে দিন শুরু করাটা হলো আদর্শ দিনের শুরু হওয়া। পরের সুবিধা হলো এটি আমাদের কর্মদক্ষতা কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। সেটি কিভাবে সম্ভব? রুটিন করে কাজ করলে অল্প সময়ে অনেক কাজ করার অভ্যাস গড়ে উঠে। অপ্রয়োজনীয় কাজ করা হয়না। কারণ সারাদিনে কয়েকবার রুটিন চেক করা হয় যা মাথায় সেট হয়ে যায়। চাইলেও আজেবাজে কাজ বা চিন্তা করার সময় থাকেনা।

রুটিন করে কাজ করার আরেকটি বড় সুবিধা হলো প্রয়োজনীয় কাজগুলো ফেলে রাখার সুযোগ থাকেনা বললেই চলে। তাই ডেডলাইন মিস হওয়ার সম্ভাবনা ও শেষ মুহূর্তে হুড়াহুড়ি করে কাজ করতে হয়না। কারণ আপনি এমন কাজগুলোই প্রতিদিনের লিস্টে নিয়ে আসবেন যেগুলো সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন। প্রায়োরিটি সেট করে কাজ করার অভ্যাস ও রুটিনের মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে।
লিস্ট বানিয়ে দৈনন্দিন কাজ করার অভ্যাসটি জীবনে স্ট্রেস কমিয়ে সুখ ও মানসিক শান্তি নিয়ে আসতে পারে। দেখুন না, প্রতিদিনের অশান্তির অন্যতম কারণ হলো না পাওয়া। সব কিছু পাওয়ার জন্য দরকার গুছিয়ে কাজ করা ও সময়ের সঠিক ব্যবহার। রুটিন ওয়ার্ক আপনাকে সব কিছু দিতে পারে। শুধু দরকার অভ্যাসটি রপ্ত করা। এখন কথা হলো কিভাবে আয়ত্বে আনবেন এ অভ্যাসকে?
এ কাজ আমাদের খুব পছন্দের তালিকায় পড়েনা। হয়তো ৩ দিন রাখলেন ৪র্থ দিন আর ইচ্ছেই করেনা। মনে হয় এত প্যারা নিয়ে লাভ কি? কাজতো চলছেই। আবার রুটিন ছাড়া জীবনে ফেরত চলে যাই। এ ইচ্ছেটিকে ধরে রেখে রুটিনের অভ্যাস করতে হলে শুরুতে রুটিন কেন প্রয়োজন তা নিজে উপলদ্ধি করতে হবে। কাজের লিস্ট থাকলে কি ভালো হতে পারে আর না থাকলে কি খারাপ হতে পারে তা নিজে উপলদ্ধি করুন। একটু অনলাইনে ঘাটাঘাটি করুন। এরপরের কাজ হলো ফাইন্ডিংস গুলোকে একটি ফ্যাক্টস আকারে কোথায় লিখে রাখা। আর নিজেকে কনভিন্স করা যে এ কাজটি আপনাকে করতেই হবে। ফ্যাক্টস শিটের ভালো দিকটি হলো যখন আপনার মন সায় দিবেনা কাজের লিস্ট বানিয়ে নিতে, তখন এ ফ্যাক্ট শিটে একবার চোখ বুলিয়ে এর গুরুত্ব অনুধাবন করুন। তাহলে কাজটিকে কখনো গৌণ মনে হবেনা। যে কোন অভ্যাস আয়ত্ব করতে এ ফ্যাক্ট শিটের সাহায্য নিতে পারেন।

তো, শুরু করে দিন আজ থেকেই। ডায়েরী বা নোট প্যাড যেখানেই হউক দিনের শুরুতে কাজ গুলো গুছিয়ে লিখে ফেলুন। তারপর সেভাবেই দিন শেষ করুন। রাতে যখন কাজ গুলো শেষ করার পর একটি একটি করে ক্রস দিয়ে কেটে দিবেন বা টিক দিবেন, তখন মানসিক শান্তি আসবে মনে। একটি ভালো দিন পেতে এর চেয়ে ভালো কিছু হয়না। সপ্তাহখানেক পরেই খেয়াল করলে দেখবেন একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। ইফেক্টিভ একজন মানুষ হচ্ছেন আপনি।