” কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না” – আমাদের বিয়ের গল্পটা হৈমন্তী গল্পের একই ভার্সন। সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করে চাকুরীতে জয়েন করেছি, তার কিছুদিনের মধ্যেই চাচার মারফতে আব্বাজান খবর পাঠালেন যে বিয়েটা এবার করতে হবে! চাচা সুন্দর করে ইনিয়ে বিনিয়ে ধর্ম-কর্ম বুঝিয়ে বললেন ‘এবার রাজী হয়ে যাও’! বাপজানের থিওরি হলো ছেলে বিয়ে করবে ২৫ এর মধ্যে! আর রেফারেন্স দিবে নিজের বিয়ের যেটা এখন থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগের ঘটনা। দাদাজান নাকি ওনাকে মোটামোটি এ একই বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যাস, সে রুলস এখন দাদার নাতীদের উপর চলছে!
যাক, সে আলোচনার ২/৩ মাস পরে বাসায় একদিন রাতে খাওয়া দাওয়ার আগে বাপজান আমার রুমে আসলেন আর খুব সুন্দর করে বেশ কিছু ব্যপার স্যাপার বুঝিয়ে আমাকে বিয়ের কথা বললেন, এবং যথারীতি পছন্দ অপছন্দের কথা জিজ্ঞেস করলেন। তারপর কন্যা পছন্দ করা হলো আর তার ৬ মাসের মধ্যে বিয়ে! আমার অফিসের কলিগরা মজা করে বলতো আমি নাকি বাল্য-বিবাহ করেছি আর সে জন্য পুলিশে দিবে! হাহা! গায়ে মাখাতাম না, যেহেতু বিয়ে নিয়ে বেশি দেরী করার প্ল্যান আখেরে আমার ও ছিলনা!
বিয়ের যথারিতী আয়োজন, খানাপিনা, হৈ-হুল্লোড় আর কবুল বলা! ব্যাস, একজন আমার জীবনের সাথে জুড়ে গেল সারাজীবনের জন্য।সে থেকে সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি চলছে, ভালোবাসা- বাসি, হাসাহাসি, ঘুরা-ফেরা, অভিমান-অভিযোগ, রাগ-আদর, টক-ঝাল-,মিষ্টী এভাবেই যাচ্ছে দিনগুলো। আলহামদুলিল্লাহ। এর মধ্যে আমাদের লাখ-কোটি স্মৃতি জমা হয়েছে, অনেক পথ একসাথে হাঁটছি, স্বপ্ন দেখি একসাথে যে একদিন এটা করবো, সেটা করবো, এদেশ-সেদেশ ঘুরে বেড়াবো, আমেরিকার সব স্টেট একসাথে ঘুরে দেখবো, অমুক দেশের তমুক জায়গায় স্কাই-ডাইভিং করবো। কত স্বপ্ন!
আমাদের মজার ব্যপারটা হলো সব কিছু আমি শেয়ার করি তার সাথে, একদম সবকিছু। ২ অফিসের সব কলিগদের নাম জানতো মুনা কারণ আমি এসে গল্প করতাম আজ অমুক কলিগের সাথে বাইরে খেয়েছি, তমুকের সাথে গল্প হয়েছে বা বসের সাথে এটা হয়েছে ইত্যাদি। এ শেয়ারিং গল্প থেকে শুরু করে আমার ফেস করা প্রতিটা ঝামেলা, প্রতিটা কষ্ট,দুঃখ, ফেইল, পাশ, সাকসেস থেকে শুরু করে ফেসবুক আর সব কার্ডের সিকিউরিটি পর্যন্ত প্রসারিত। আমাদের থিউরি হচ্ছে ভালো থাকতে গেলে লুকোচুরি বা অবিশ্বাস কোন ভাবেই সম্পর্কে ঢুকতে পারবেনা। বাকী যাই হউক!
প্রতিদিন আমরা অনেক অনেক কথা বলি কিন্তু কক্ষনো এমন হয়নি যে আর কথা নেই বলার জন্য! অদ্ভুত লাগে মাঝে মাঝে আর আমরা রিয়ালাইজ করে হেসে ফেলি যে স্টক কত! হ্যাঁ, মাঝে মাঝে যখন ঝগড়া করি, তখন কথা হয়না। হয়তো ১ বেলা বা একদিন অথবা ২ দিন, তারপর যখন রাগ পানি হয়, তখন জমা কথা গুলো বলতে আরও বেশি সময় লাগে! আমাদের অনেক কিছুতে মিল আছে আবার অমিলের লিস্ট করলেও কিন্তু বিশাল হবে, বাট মানিয়ে যাচ্ছি। তার ঝাল পছন্দ তো আমার মিষ্টি, তার চিকেন বিরিয়ানী তো আমার কাচ্চি এমন অনেক বৈপরিত্য সম্পর্কের কেমিস্ট্রি বাড়ায় কিন্তু!
অনেক কিছু বলে ফেললাম, আমি আসলে স্পেসিফিক দিন নিয়ে আগ্রহ দেখাই কম কিন্তু ৩ বছর পার করে কেন জানি অনেক কিছু লিখে ফেললাম। ৩ বছর খুব লম্বা সময় নয় হয়তো, তাও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই যে সব মিলিয়ে তিনি খুব ভালো রেখেছেন। যারা এতটুকু পড়লেন, তাদের কাছে একটু দোয়া চাই যেন প্রতিটা বছর শেষে আমাদের গল্পটা আরও সুন্দর হয়, আমাদের সুখ আর শান্তিটা উত্তোরত্তোর বাড়ে এবং এভাবেই যেন পাশা-পাশি অনেক দূর হেটে যেতে পারি।
তোমাকে ধন্যবাদ মুনা এ গল্পের অন্যতম গেম মেকার আর পিস-মেকার হওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন গুলো পূর্ণতা পেতে একসাথে কঠিন ঝড়-ঝঞ্জাট পাড়ি দিতে হতে পারে, আমি সবমসয়ের মত হয়তো বিষণ্ণ নাবিকের মত দিক-কূল না পেয়ে মুষড়ে পরতে পারি, আবার হয়তো কোন কষ্টে খেই হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে পারি। আর আমি জানি, তুমি ছায়া হয়ে সবসময় থাকবে আর চুলে হাত বুলিয়ে বলবে ‘সব ঠিক হয়ে যাবে, ইনশা-আল্লাহ. তুমি একদমই টেনশন করোনা তো!’ ব্যাস, এতটুকুই চাই। জানোই তো, আমার চাওয়া গুলো এমনই ছোট! আর জগতের বেশিরভাগ চাওয়া কোন এক অদ্ভুত কারণে তোমার কাছেই।
Happy Anniversry my love!
মার্চ ০৯ এথেন্স, ওহাইও, যুক্তরাষ্ট্র
One Response
Such a nice story