আমাদের জীবন হলো কিছু অভ্যাসের সমষ্টি। যে যত বেশী ভালো অভ্যাস আয়ত্ব করতে পারে, সে তত বেশী ভালো থাকে আবার বিপরীতে খারাপ অভ্যাস গঠন করলে, জীবন ও খারাপ যাবে। The Power of Habit বইতে লেখক ভালো অভ্যাস গঠনের গুরুত্ব ও এর সাথে মানুষের ভালো থাকার সম্পর্ক বেশ কিছু উদহারণ দিয়ে আলোচনা করেছেন। বাস্তবিক জীবনে কৃতজ্ঞতাবোধ চর্চার অভ্যাস করে আমরা ভালো থাকতে পারি। দেখে নেই আসলেই কৃতজ্ঞ হওয়ার কিছু আছে কিনা আমাদের জীবনে? পড়ুন আর নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখুন না, কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যাবে আর নিজেকে সুখী মনে হবে আত্মিক অনুধাবনে।
আমি প্রতিনিয়ত কৃতজ্ঞ হই সৃষ্টিকর্তার কাছে, যিনি আমাকে অনেক বেশী দিয়েছেন।আমি বেঁচে আছি, নিঃশ্বাস নিচ্ছি, সুস্থ্য আছি, হাত-পা সহ পূর্ণাংগ শরীর আছে এখনো, চোখে দেখি, কানে শুনি, শক্তি আছে, ব্রেইন কাজ করছে, ভেতরের সব অর্গান খুব ভালোভাবে কাজ করছে। এ সম্পূর্ণ শারীরিক ফাংশনের জন্য কোটি কৃতজ্ঞতা।এসব কিছুর একটি জিনিস ও মিসিং হলে জীবন কত অপূর্ণাংগ, তা যার নেই তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, অথবা যে কোন মেডিকেলের ২-৩ টি ইউনিট ঘুরে রোগীদের দেখে আসতে পারেন। কৃতজ্ঞ হতেই হবে।
আমার পরিবার আছে। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী সহ ভাই বোনের সন্তানেরা আছে। পিতা-মাতা বেঁচে আছেন।অনেক ভালোবাসেন সবাই আমাকে। অনেকের এর মধ্যে অনেক জনই নেই। চাইলেও কাছে পায়না। চিরতরে হারিয়ে গেছে। আমাদের যাদের আছে, আমরা অতি ভাগ্যবান। এর পর চাচা-চাচী, মামা-মামী, ফুফা-ফুফী, শশুর-শাশুড়ী সহ ওনাদের সন্তানেরা আছে। তাদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা, সহযোগীতা হৃদয় টাকে ভরিয়ে তোলে। অনেকেই এ ওয়ার্ম পাইনা। যারা পাই, তারা কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
আমি শিক্ষিত। মাস্টার্স শেষ করেছি। ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনার সুযোগ হয়েছে। এ সুবাদে, অনেক ভালো ফ্রেন্ড পেয়েছি, অনেক মানুষের সাথে কথা বলার ও মেশার সুযোগ হয়েছে, অনেক অর্গানাইজেশনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, পৃথিবীকে জানতে পেরেছি, অসাধারণ কিছু শিক্ষক পেয়েছি আর পেয়েছি একটি ক্যাম্পাস। আমি কেন কৃতজ্ঞ হবোনা? স্পস্ট মনে আছে, সে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকেই আমার সাথে পড়াশুনা করা বন্ধুরা ঝড়ে পড়া শুরু করেছে। এরপর বিভিন্ন লেভেলে কতজন গেল! মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর সুযোগ হয়নি। কেউ উচ্চ মাধ্যমিকের আগেই শেষ আবার অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেনি। এই আমরা যারা যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করছি,তারা নিজেদের কতটুকু ফরচুনেট ভাবতে পারি! কৃতজ্ঞ না হয়ে কই যাবো!
আমি ইনকাম করি আর কারো কাছে মুখাপেক্ষি হতে হয়না। শক্তি আর বুদ্ধি দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। হয়তো কম-বেশী ইনকামের পরিমাণ। কিন্তু যাদের এ ইনকামের সোর্স আছে, তারা কৃতজ্ঞ হবোনা কেন? রাস্তায় কত ভিখারী দেখি, ছিচকে চোর থেকে শুরু করে বড় ডাকাত রা পর্যন্ত সব করে বেড়ায় এ আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য। ধরলাম কেউ টিউশনি করেই চলে, ফ্যামিলি তে কিছু দিতে পারে অথবা পারেনা কিন্তু ভিক্ষা বা অবৈধ পথ অবলম্বন করা লাগেনা রিজিকের জন্য। অল্পে তুষ্ট হয়ে চলছি আর প্রাণান্তকর চেষ্টা করছি নিজের উপার্জনকে বাড়িয়ে নেয়ার। থাকার জন্য একতা ঘর আছে। আরাম তোষক আছে। এর চেয়ে খারাপ অবস্থায় অনেকে আছে, তাহলে আমার কৃতজ্ঞতার সীমা থাকা উচিত নয়!
আমি যুদ্ধ বিদ্ধ্বস্ত কোন দেশের বাসিন্দা নই, যেখানে মানুষ ২ চোখ ভয়ে বন্ধ করতে পারেনা যে কবে বোমার আঘাতে নিজে ও পরিবার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়! এমন কোন দেশে নেই, যাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে হয়! অন্তত পক্ষে আমরা অনেকেই নির্ভয়ে ঘুমাতে পারি। সকালে অক্ষত অবস্থায় জাগার স্বপ্ন দেখতে পারি। গ্যাস বোমার নিঃশ্বাসে আস্তে করে পৃথিবী ত্যাগের ভয় থাকেনা। কি করতে পারতাম, যদি আমাদের জন্ম তেমন কোন দেশে হতো? পালাতে পারতাম না হয়তো! তেমন অবস্থা না থাকার জন্য কি কৃতজ্ঞ হবোনা?
এমন অনেক অনেক কিছু আমাদের আছে, যেগুলোর জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। যে লেভেলেই থাকিনা কেন, আমাদের চেয়ে খারাপ অবস্থায় অনেকেই আছেন। সেদিকে তাকালে ভালো থাকবো। তুলনা করতে হলে নিচের জনের সাথেই করি আমি! কত জনের চেয়ে ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আর সাথে লাগে একটু ধৈর্য। আমি পাচ্ছিনা আজ, কাল পাবো! নাইলে পরশু অথবা ৬ মাস পর নাহলে ১ বছর বা ২ বছর। আমি পাবোই এ দৃঢতা নিয়ে ধৈর্য ধরে সামনে আগাবো। যদি চাওয়ার জায়গা না পাই, তো কি হইসে, অলটারনেটিভ কিছু ভেবে রাখবো। অপশন A,B,C,D। যে কোন একটি কাজ করবেই। সেটা ক্যারিয়ারের জন্য হউক বা অন্য যে কোন কিছুতেই।
এত কথা বলার কারণ হলো, নিজের পাওয়া জিনিস গুলোর জন্য কৃতজ্ঞতাবোধ মনে প্রশান্তি দেয়।বেঁচে থাকার রসদ দেয়। পজিটিভ এনার্জি জোগায় আর হতাশ করেনা। বিশ্বাস করেন বা নাই করেন, এ কৃতজ্ঞতা বোধের চর্চা অনেকাংশেই ভালো রাখে মানুষকে। এর পর ও হতাশা আসবেই, উত্থান পতন আসবেই, দুঃখ-কষ্টের পাহাড় আসবেই। সেগুলো মোকাবেলা করার জন্য পজিটিভ মাইন্ডসেটই যথেষ্ট। অন্তত সুইসাইড করার মত অত নেগেটিভ এনার্জি আসবেনা, ইনশা-আল্লাহ। প্রশ্নই আসেনা তেমন কিছু করার। কারণ আমি যানি একটা সুযোগ মিস হলে সামনে আরো হাজারো সুযোগ আসবে বা আমি তৈরী করে নিব।
এ মুহূর্তেই নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন না, কত বেশী ব্লেসড আমি-আপনি! কত কি আছে আমাদের! তার পর বুক ভরে ৩-৪ তা নিঃশ্বাস নিয়ে এ নিয়ামত গুলো কাজে লাগিয়ে কি কি করতে বা হতে পারি, সেদিকে নজর দেই। আমাদের পটেনশিয়ালিটি আমাদের দূর্বলতা থেকে অনেক বড়। আমি জানি, আমরা ভালো থাকবো!
আসুন প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা বোধ চর্চা করি। সকালে উঠে সব কিছুর আগে একটি নতুন দিনের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়েই শুরু হউক দিন। তারপর এক এক করে দেখুন না কত কিছু আছে আমাদের! যতদিন না এটি অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে ততদিন চালিয়ে যান। জীবন ভালো যাবেই।
One Response
Love u