ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ বছরে সেন্ট্রাল লাইব্ররীতে কতদিন গিয়েছি হাতে গুনে বলে দেয়া যাবে। বাসায় থাকা হতো বলেই হয়তো লাইব্রেরিতে খুব একটা যাওয়া হতোনা। আরেকটা বড় কারণ ছিল লাইনে দাঁড়িয়ে সিট ধরা বা MP3 বইয়ের বাইরে একাডেমিক বই পড়া কেমন একটা ব্যপার ছিল। যাই হোক, ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ে ও একটা লাইব্রেরি আছে৷ নাম হলো Alden Library। ৭ তলা বিশিষ্ট এ লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ৩ মিলিয়ন, সাথে আছে ২৫০০০০ মিডিয়া আইটেম। আমেরিকার সবচেয়ে বড় ১০০ একাডেমিক লাইব্রেরির মধ্যে এটিও একটি। একসাথে ৩০০০ মানুষ লাইব্রেরীতে বসে পড়াশুনা করার ফ্যাসিলিটি আছে।
এ লাইব্রেরিতে কি কি আছে জেনে নেই। ঢুকলেই পাবেন বিশাল রিসেপশন।২/৩ জন দাঁড়িয়ে আছে হেল্প করতে, তার আশে পাশে আছে অনেক গুলা কম্পিউটার এবং প্রিন্টার, পাশেই একটা কফি শপ, একটু আগালেই সিটিং এ্যারেঞ্জমেন্ট শুরু। কম্পিউটার ফ্রি এক্সেস করা যায় কিন্তু প্রিন্ট দিতে টাকা লাগে। লাইব্রেরি ফ্যাসিলিটি ২৪ ঘন্টা খোলা। কোন ফ্লোর কোনদিন কতক্ষণ খোলা থাকে সেটা ওয়েবসাইটে আপডেট পাওয়া যায়।

এ লাইব্রেরিতে করোনা আসার আগে পর্যন্ত অনেক দিন গিয়েছি৷ কিছু ফ্লোরে ব্লক ব্লক করা আছে জোন হিসেবে। যেমন- একটা জোন হলো Quite, অর্থাৎ এখানে খুব একটা শব্দ করা যাবেনা বা গ্রুপ ডিসকাশন করা যাবেনা কিন্তু ২ জনে মিলে হয়তো কথা বলতে পারবেন। আরেকটা জোনের নাম Very Quite অর্থাৎ এখানে কোন শব্দই করা যাবেনা। আমি নরমালী কোয়াইট জোনে বসতাম তো একদিন কি মনে করে চিন্তা করলাম এক্সট্রা কোয়াইটে গিয়ে পড়াশুনা করবো। গিয়ে আধ ঘন্টা পর নিস্তব্দতায় ঘুম পাবে মনে হচ্ছিল। ৮-১০ জন পড়াশুনা করছে কিন্তু মনে হলো কেউ নেই। কাশি দিব, সেটা ও মনে হলো ঠিক হবেনা যেহেতু অন্যরা পড়ছে, তারপর থেকে আর যায়নি ভুতুড়ে পার্টে!

গ্রুপ স্টাডি বা মিটিং করার জন্য কতগুলো আলাদা রুম আছে। অনলাইনে বুক করতে হয় দিন ও সময় ঠিক করে। আমরা কয়েকটা গ্রুপ মিটিং করেছি। কিছু রুমে প্রজেক্টর আছে প্রেজেন্টেশনের জন্য। জেনারেল লাইব্রেরিয়ানের বাইরে ও প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট এর জন্য আলাদা ‘সাব্জেক্ট লাইব্রেরিয়ান’ আছে। এদের আবার কাজ কি? ওনারা হলেন একেক সাব্জেক্টে এক্সপার্ট। ধরুন, আপনি কোন এসাইনমেন্ট করছেন কিন্তু যে রিসোর্স দরকার পাচ্ছেন না, তাহলে ওনারা আপনাকে খুজে দিবে সে রিসোর্স। আমার ২ টা কাজে ২ বার এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে হেল্প পেয়েছি।
রাইটিং এর কথা আসতেই মনে পড়লো বেশ ইম্পর্টেন্ট আরেকটা সার্ভিসের কথা যেটা লাইব্রেরি থেকে নেয়া যায়, সেটা হলো যে কোন লিখা ঠিক ঠাক করে নেয়া যায় এখানে। একটা ল্যাব আছে যাদের কাজ হলো আমরা যা লিখছি সেগুলোর কোয়ালিটি চেক করা, রেফারেন্স চেক করা আর অভারল ফিডব্যাক দেয়া। বেশ ভাল সাপোর্ট পাওয়া যায়৷

এবার আসি লাইব্রেরির আসল কাজ যেটা বই ধার দেয়া নিয়ে। এদেশে দূর্ভাগ্যবশত কোন নীলক্ষেত নেই যেখানে কপি বই পাওয়া যাবে আর তাই একমাত্র ভরসা লাইব্রেরি। কারণ কিনে পড়ার সামর্থ্য অন্তত আমার নেই। লাইব্রীরীর ওয়েবসাইটে সার্চ দিয়ে বই খুঁজে বের করে সেটা নেয়ার রিকুয়েস্ট দিলে যদি এভেইলেভল থাকে, তাহলে আপনি গিয়ে পিক আপ জোন থেকে নিয়ে আসতে পারবেন। যদি আম্মাদের লাইব্রেরীতে না থাকে, তাহলে ওহাইও লিংক নামে একটা লিংকে গিয়ে খুঁজে নেয়া যায় যেখানে আরও প্রায় ২০০-৩০০ ভার্সিটির লাইব্রেরীর থেকে বই লোন নেয়া যায় যেটাকে ‘ইন্টার লাইব্রেরী লোন’ বলে। অন্য লাইব্রেরী থেকে বই আসতে কিছুদিন টাইম লাগে, কাজ শেষ হলে এ লাইব্রেরীতে ফেরত দিলে ওরাই আবার পাঠিয়ে দিবে যেখান থেকে এসেছিল সেখানে। তাই, এখানে বই কেনা লাগেনা বললেই চলে। আর একাডেমিক আর্টিকেলের সফট কপি ও আমাদের লাইব্রেরী আইডি দিয়ে লগইন করলে অনেক গুলো এক্সেস একদম ফ্রি থাকে।

দিন শেষে, লাইব্রেরী কাজে লাগানোর মজা এতটা হয়তো বুঝতাম না এ লাইব্রেরীর সুবিধা গুলো না নিলে।